বরিশালের আগৈলঝাড়ায় চৈত্র সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নীল পূজার গান উৎসব। দিনে ও রাতে গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে মহাদেব, পার্বতী ও অন্যান্য দেব-দেবীর অবয়ব ধারণ করে লালিত সংস্কৃতির এই লোকেৎসব পালিত হয়ে আসছে আগৈলঝাড়ার গ্রামীণ জনপদে।
ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান হলেও আনন্দ উচ্ছাসে ভরপুর নৃত্য-গীত এর এই লোকজ সংস্কৃতির সাথে পরিচিত সকল ধর্মের লোকজনই। সকলেই উপভোগ করেন নীল পুজা ও গানের লোকেৎসব।
নীল পূজা বা নীল ষষ্ঠী হল সনাতন ধর্মের এক লোকোৎসব। যা মূলত নীল-নীলাবতী নামে (শিব ও পার্বতী {দূর্গা}) বিবাহ-অনুষ্ঠানের স্মারক উৎসব। নীল উৎসবের পালা গানকে বলা হয় অষ্টক গান।
পুরাণ অনুসারে- নীল বা নীলকণ্ঠ দেবাদীদেব মহাদেব শিবের অপর নাম। সেই নীল বা শিবের সাথে নীলচন্ডিকা বা নীলাবতী পরমেশ্বরীর বিয়ে উপলে লৌকিক আচার-অনুষ্ঠান সংগটিত হয়। কাহিনী অনুসারে, রাজা দ যজ্ঞের মাধ্যমে দেহত্যাগের পর শিব জায়া সতী পুণরায় নীলধ্বজ রাজার বিল্ববনে সুন্দরী কন্যারূপে আবির্ভূত হন।
রাজা তাকে নিজ কন্যা রূপে লালন-পালন করে শিবের সাথে বিয়ে দেন। বাসর ঘরে নীলাবতী শিবকে মোহিত করেন এবং পরে মপিারূপ ধরে ফুলের সঙ্গে জলে নিপ্তি হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। রাজা-রাণীও শোকে প্রাণ বিসর্জণ দেন। নীল পূজা শিব ও নীলাবতীর বিবাহ-অনুষ্ঠানের স্মারক।
বাঙ্গালী গৃহিণীরা তাদের সন্তানের নীরোগ, সুস্থ জীবনের মঙ্গল কামনায় নীল ষষ্ঠী ব্রত পালন করে। সাধারণত চৈত্র সংক্রান্তির চড়ক উৎসবের আগের দিন নীল পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
নীল সন্ন্যাসীরা ও শিব-দুর্গার সঙেরা পূজার সময়ে নীলকে সুসজ্জিত করে গীতি বাদ্য সহযোগে বাড়ি বাড়ি ঘুরে এবং ভিা সংগ্রহ করেন। নীলের গানকে বলা হয় অষ্টক গান। এই দিন সন্ধ্যাবেলায় রমণীরা সন্তানের কল্যাণার্থে প্রদীপ জ্বালিয়ে শিব পূজা করে সারাদিনের উপবাস ভঙ্গ করেন।
তবে পঞ্জিকা অনুসারে ষষ্ঠী তিথি না হলেও নীল ষষ্ঠী পালন করা হয় এদিন। বাংলার বারো মাসের তেরো পার্বণের অন্যতম উৎসব নীল ষষ্ঠীর ব্রত। এই ব্রতর বিশেষত্ব হল এই ষষ্ঠী কোন দেবী নন, পূজিত হন মহাদেব।
নীল ষষ্ঠীর পরের দিন চৈত্র সংক্রান্তি। আর এর পরের দিন পয়লা বৈশাখ। গ্রাম বাংলায় চৈত্র সংক্রান্তিতে চরক পূজা করা হয়। চরক উপলে অনেক স্থানে বসে গাজনের মেলা। এদিনের পুজোকে নীল পুজো বলা হয়ে থাকে। পূজা উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে বসে গ্রামীণ মেলা।